১৯৭৩ সালে মহিলাদের জন্য দুটি সোসিও ইকোনোমিক ট্রেনিং সেন্টার চালু করা হয়। ঢাকার মিরপুর ও রংপুরের শালবনে প্রতিষ্ঠিত সেন্টার দুটিতে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলারা যাতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সক্ষম হয়, সে উদ্দেশ্যেই স্থাপিত হয় আর্থ-সামাজিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ দুটি কেন্দ্রে বর্তমানে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ২১৮ এবং শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৬,৬৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীকে চামড়ার জিনিসপত্র তৈরি, ব্লক-বাটিক, প্রিন্টিং, ফুল তৈরি, উল বুনন, পুতুল তৈরি, দর্জি বিজ্ঞান, এমব্রয়ডারি, পোষাক তৈরি, বাঁশ ও বেতের কাজসহ বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের সুযোগ প্রদান করা হয়।
১৯৬৭ সাল থেকে সমাজসেবা অধিদফতরের অধীন আন্তঃপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার) এর মাধ্যমে অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি। অধিদফতরের বিশাল জনবলের প্রশিক্ষণ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে ১৯৮১Ñ৮২ সালে ‘আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীতে তিনটি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। কেন্দ্র তিনটির মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদফতরের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানোন্নয়ন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীদের বিভাগভিত্তিক নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ১৯৯৯Ñ০২ অর্থবছরে চট্রগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে ‘আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও উন্নয়ন’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এ তিন বিভাগে একটি করে তিনটি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। সমাজসেবা অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়সহ ৬৪টি জেলায় ও ৪৮১টি উপজেলায় অধিদফতরের প্রশাসনিক অবকাঠামো ও বিভিন্নমুখী কার্যক্রম রয়েছে যার জনবল ১২ হাজারের অধিক। এ অধিদফতরের অধীনে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের জাতীয় উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও জাতি গঠনমূলক কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের ছয়টি বিভাগে একটি করে ছয়টি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে মাঠ পর্যায়ে অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে বার্ষিক গড়ে ছয়টি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হয়। প্রতি কোর্সে ৩০ থেকে ৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ হিসেবে ছয়টি কেন্দ্রে প্রতি বছর আনুমানিক ১২০০ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সমাজসেবা অধিদফতরের শুরু থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে জুন ২০১৭ পর্যন্ত অধিদফতরের ১৪৫৭০ জন মাঠকর্মীকে ক্রমপুঞ্জিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীদের পেশাগত জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অধিদফতরের বিভিন্ন কর্মসূিচ বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও গতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ
অফিস ও কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর্স;
শহর সমাজসেবা কার্যক্রম বিষয়ক কোর্স;
হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম বিষয়ক কোর্স;
উপজেলা সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর্স;
সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বিষয়ক কোর্স;
শিশু পরিবার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর্স;
মানবিক সম্পর্ক, দাফতরিক শিষ্টাচার ও সামাজিক আচরণ বিষয়ক কোর্স;
পল্লী সমাজকর্ম (আরএসএস) ও পল্লী মাতৃকেন্দ্র (আরএমসি) বাস্তবায়ন বিষয়ক কোর্স;
বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন বিষয়ক কোর্স;
অফিস ও মাঠ কার্যক্রম তত্ত্বাবধান বিষয়ক কোর্স;
ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর্স;
বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কোর্স;
স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সাংগঠনিক কর্মকা- পরিচালনা ও নেতৃত্ব উন্নয়ন কোর্স;
প্রতিবন্ধী বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্স;
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স; এবং
চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য প্রশিক্ষণ কোর্স।
প্রশিক্ষণকে কার্যকর ও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে আধুুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অনুসৃত প্রশিক্ষণ পদ্ধতিগুলো হচ্ছে, ক্লাস লেকচার, আইস ব্রেকিং, রোলপ্লে, অনুশীলনী, ঘটনা সমীক্ষা, ফিডব্যাক, চিত্র প্রদর্শনী, ব্যক্তি/দলীয় আলোচনা ও উপস্থাপনা, দলীয় কাজ ও দলগত প্রতিবেদন এবং মাঠ পরিদর্শন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস